আঃ রাজ্জাক শেখঃ খুলনার রূপসা উপজেলার জাবুসা বিলের প্রায় ৫শ’ বিঘা জমির রোপা আমন ধান গাছ লাল হয়ে শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। এতে কৃষকদের মরার উপর ঘাড়ার ঘা শুরু হয়েছে।
ধানগাছগুলো দেখলে পোড়া টুকরোর মতো মনে হয়। কারেন্ট পোকার (বাদামী গাছ ফড়িং) ব্যাপক আক্রমণ দেখা দেয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে ধারণা করছেন কৃষকরা।
স্থানীয় কৃষকরা অভিযোগ করেন, বাগমারা বøকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিমাদ্রী বিশ্বাস সময়মত এ এলাকায় আসেন না। কৃষকদের কোনো পরামর্শও দেন না তিনি।
তবে, ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’র আঘাত এবং লবণ পানির কারণেও এ এলাকার প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার বিঘা জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে বলে সূত্র জানিয়েছে। শুধু জাবুসা বিল নয়, এভাবে খুলনার বটিয়াঘাটার খারাবাদ, ডুমুরিয়া ও দাকোপসহ বিভিন্ন এলাকায় আমনে পোকার আক্রমণের খবর পাওয়া গেছে। ফলে কৃষকরা আমন ঘরে তুলতে পারবেন কি-না এ আশঙ্কায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
জাবুসা গ্রামের কৃষক হালিম মোল্লা, মো. ইকবাল, মো. বুলবুল ও তাদের জাবুসা বিলে চাষকৃত রোপা আমন ধান কারেন্ট পোকার আক্রমণে পুড়ে মরে গেছে। এ ধান থেকে কোনো ফলন পাওয়া যাবে না। কৃষকরা আরও জানান, জাবুসা পশ্চিমপাড়ার বিলে প্রায় ৫শ বিঘা জমির রোপা আমন ধান কারেন্ট পোকার আক্রমণে পুড়ে গেছে। স্থানীয় কৃষকেরা এবার কাঁচি নিয়ে মাঠে ধান কাটতে যেতে পারছে না। এতে এ গ্রামের কৃষকদের মধ্যে চরম হতাশা ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
কৃষক ও স্থানীয় নৈহাটি ইউপি’র ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বাবর আলী চরম হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘জাবুসা বিলের সব ধান নষ্ট হয়ে গেছে, বন্যার পরে ধান গাছ পুড়ে লাল হয়ে মরে গেছে। ১৫শ থেকে ১৬শ বিঘা জমির সব ধানেরই একই অবস্থা। গাছে ধানতো নেই, বরং এর কুটো (খড়) গরুতেও খাচ্ছে না। কোনো ওষুধেও কাজ হচ্ছে না।’
এদিকে, বুধবার সকালে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ফরিদুজ্জামানসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্থ ধান ক্ষেতের বিল পরিদর্শন করেছেন। উপজেলা কৃষি অফিস ক্ষতিগ্রস্থ এমন ১শ থেকে দেড়শ কৃষকের তালিকা তৈরি করেছে। তবে, জেলা কৃষি কর্মকর্তা বিষয়টি অবহিত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রূপসা উপজেলার জাবুসার পশ্চিমপাড়ায় বিলে (জেমিনি সী ফুডস’র দক্ষিণ দিকে) প্রতি বছর নাবি রোপা আমন ধান চাষ করা হয়। এ বছর হঠাৎ করে ‘কারেন্ট’ পোকার (বাদামী গাছ ফড়িং) ব্যাপক আক্রমণে ধান গাছ শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। কারেন্ট পোকা ধান গাছের গোড়ায় বসে রস শুষে খেয়ে ফেলছে। ফলে গাছ পুড়ে খড়ের মতো হয়ে যাচ্ছে। কোনো ফলন হচ্ছে না। কোনো কীটনাশক ব্যবহার করেও এ পোকা দমন করা যাচ্ছে না বলে স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে তারা চরম হতাশা গ্রস্থ হয়ে পড়েছেন। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, বিষয়টি রূপসা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।
এমনকি জাবুসা বিলে কারেন্ট পোকার ব্যাপক আক্রমণে আমন ধান পুড়ে নষ্ট হবার পরও তিনি এ এলাকায় আসেননি। এতে জাবুসা গ্রামের কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও হতাশা সৃষ্টি হয়েছে।
রূপসা উপজেলা কৃষি অফিসার মো. ফরিদুজ্জামা বলেন, জাবুসা বিলের ধান মূলত তিন কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’র আঘাত, বাদামী গাছ ফড়িং বা কারেন্ট পোকার আক্রমণ এবং জমিতে লবণ পানি জমে থাকা। কারেন্ট পোকার আক্রমণে দেড় হেক্টর (৮-১০ বিঘা) জমির ফসল নষ্ট হতে পারে। তবে, অন্যান্য বিষয়ে ওই এলাকার প্রায় ২ হাজার বিঘার জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্থ এমন ১শ থেকে দেড়শ কৃষকের তালিকা তৈরি করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনিবলেন, কৃষকদের ধান গাছে কীটনাশক প্রয়োগ, আলোক ফাঁদ বিতরণ এবং অন্যান্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এমনকি বুধবার সকালে তিনি অন্যান্য কর্মকর্তাদের নিয়ে আক্রান্ত মাঠ পরিদর্শন করে কৃষকদের ওষুধ প্রয়োগসহ অন্যান্য পরামর্শ দিয়েছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খুলনার উপ-পরিচালক পংকজ কান্তি মজুমদার বলেন, রূপসার জাবুসা বিলে কারেন্ট পোকার আক্রমণের বিষয়ে মঙ্গলবারই তিনি উপজেলা কৃষি অফিস থেকে এক প্রতিবেদন পেয়েছেন।
তিনি জানান, বটিয়াঘাটা, ডুমুরিয়া, দাকোপ, পাইকগাছা ও কয়রাসহ দক্ষিণের প্রায় সকল উপজেলায় কম বেশি পোকার আক্রমণ হয়েছে। জমিতে পানি জমে থাকলে এ ধরনের পোকার আক্রমণ হয় বলেও জানান তিনি।
তবে, পোকার আক্রমণ রোধে এ মুহূর্তে ধান গাছের গোড়ায় ওষুধ দেওয়া এবং লবণ পানি নামিয়ে দিতে হবে। কিন্তু পুড়ে নষ্ট হয়ে গেলে তেমন কিছুই করার নেই বলেও উল্লেখ করেন এই কৃষি কর্মকর্তা।
Leave a Reply