চরভদ্রাসন প্রতিনিধিঃ বাল্যবিবাহমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে টেকনাফ টু তেতুলিয়া দেশব্যাপী এক ব্যাতিক্রম সাইকেল ভ্রমণে নেমেছেন কাঠমিস্ত্রী আনোয়ার হোসেন। আনোয়ার বগুড়া সদর উপজেলার নিশিন্দারা ইউনিয়নের বরবাকপুর গ্রামের মৃত আব্দুল বারী তালুকদারের ছেলে। তার পরিবারে দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে।
আনোয়ারের স্বপ্ন তার প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে বালবিবাহমুক্ত হিসেবে গড়ে তোলা। তার এই অদম্য স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে তিনি দেশব্যাপী বাল্যববিাহ রোধে এবং এর কুফল সম্পর্কে সচেতনতা ও জনজাগরন করার জন্য ইতিমধ্যে তিনি গত জানুয়ারি-মার্চ ২০১৫ইং থেকে ৬৭ দিনে সাইকেল ভ্রমন করে বাংলাদেশের ৬৪ টি জেলায় বাল্যবিবাহমুক্ত নানা ধরনের প্রচার-প্রচারনা চালিয়েছেন।
তিনি বর্তমানে সাইকেল ভ্রমণ করে বাংলাদেশের ২৩৯টি উপজেলার সকল স্কুলগুলোতে বাল্যববিাহ রোধে এবং এর কুফল সম্পর্কে সচেতনতা ও জনজাগরন প্রচারনা শেষ করেছেন। তার ইচ্ছা সে পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশের প্রতিটি উপজেলায় এ সাইকেল ভ্রমনের মাধ্যমে বালবিবাহমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রচার-প্রচারনা চালিয়ে যাবেন। এজন্য তিনি সরকারি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা প্রার্থনা করেন।
আনোয়ার জানান, এপর্যন্ত তার ৬৪টি জেলা ও ২৩৯ টি উপজেলায় সাইকেল ভ্রমনের মাধ্যমে বালবিবাহমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রচার-প্রচারনায় প্রায় ৩ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। শুধুমাত্র ইউনিসেফের একটি প্রোগ্রাম করে তিনি ৭২ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা পেয়েছিলেন। সে পর্যায়ক্রমে উপজেলা ভ্রমণ শেষ করে ইউনিয়ন পর্যায়ও এ প্রচারনা চালাবেন।
গত ৬জানুয়ারি ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলায় আনোয়ারের সাথে এ প্রতিবেদকের দেখা হয়। এসময় তার পরনে ছিলো লাল রংয়ের একটি শার্ট, লাল রংয়ের একটি সাইকেল। সাইকেলের সামনে হেন্ডেলের একটি লাঠিতে বাংলাদেশের লাল-সবুজ ও লাল পতাকা লাগানো হয়েছে। সাইকেলের সামনে ও পিছনে দুটি লাল সাইন বোর্ডে টেকনাফ টু তেতুলিয়া সাইকেল ভ্রমণে বাল্যববিাহ রোধে এবং এর কুফল সম্পর্কে সচেতনতা ও জনজাগরনের দুটি লাল সাইন বোর্ড লাগানো হয়েছে। এছারা তার গায়ে লাল রংয়ের জামার সামনে ও পিছনে “বাল্যবিাবাহকে লাল কার্ড দিন, বাল্যবিবাহকে না বলুন, হতে চাইনা বিয়ের পাত্রী, হতে চাই স্কুল ছাত্রী” সহ নানা ধরনের সচেতনতা ও জনজাগরনের উক্তি লেখা রয়েছে।
আনোয়ারের বাল্যবিবাহমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমার বড় মেয়ের ১৬ বছর বয়সে বিয়ে দেই। আমার এক ভাগ্নিরও মাত্র ১৪ বছর বয়সে বিয়ে হয়ে যায়। তখন আমি বাল্যবিবাহের ভালো-মন্দ সম্পর্কে ভালো করে বুঝতাম না। বিয়ের পর ভাগ্নির একটি সন্তান হয়। সন্তার হবার পর স্বামী তার ভাগ্নিকে ছেড়ে দেয়। কিছুদিন পর তার ভাগ্নির বাবাও সড়ক দুঘর্টনায় মারা যান। এতে করে তাদের পরিবারে করুন পরিণতি দেখা দেয়। তার এই স্বচক্ষে বাল্যবিবাহের কুফল ও ঝুঁকির বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি বাংলাদেশকে বাল্যবিবাহমুক্ত করতে বিভিন্ন প্রচার-প্রচারনা চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে টেকনাফ টু তেতুলিয়া সারাদেশ ব্যাপী বাল্যবিবাহ রোধে এ সাইকেল ভ্রমণের সিন্ধান্ত নেন বলে তিনি জানান।
Leave a Reply