ফ,ম,আইয়ুব আলী, স্টাফ রিপোর্টার খুলনাঃ আজ পঁচিশে বৈশাখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১তম জন্ম জয়ন্তী। কবিগুরুর গান, কবিতা, সাহিত্য মানুষের মনে সাহস জোগায়, মনকে শান্ত করে। রবীঠাকুর বাঙালির মানসপটে সদাই বিরাজমান। বাঙালির জীবনের যত ভাবনা, বৈচিত্র্য আছে, তার পুরোটাই লেখনী, সুর আর কাব্যে তুলে ধরেছেন কবীগুরু। তার সাহিত্যকর্ম, সঙ্গীত, জীবনদর্শন, মানবতা, ভাবনা-সবকিছুই সত্যিকারের বাঙালি হতে অনুপ্রেরণা দেয়। ছেলে বেলায় জোড়াসাঁকোর বাড়িতে বা বোলপুর ও পানিহাটির বাগানবাড়িতে প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে ঘুরে বেড়াতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন তিনি। ৮ বছর বয়সে কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৮ সালে ব্যারিস্টারি পড়ার উদ্দেশ্যে তিনি ইংল্যান্ড যান। সেখানে তিনি ব্রাইটনের একটি পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন। ১৮৭৯ সালে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনে আইনবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। প্রায় দেড় বছর ইংল্যান্ডে কাটিয়ে ১৮৮০ সালে কোনো ডিগ্রি না নিয়ে দেশে ফিরে আসেন। ১৮৮৩ সালের ভবতারিণীর সঙ্গে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিবাহিত জীবনে ভবতারিণীর নামকরণ হয়েছিল মৃণালিনী দেবী। এর মধ্যেই চলতে থাকে তার সাহিত্যচর্চা। ১৮৯১ সাল থেকে পিতার আদেশে নদিয়া, পাবনা, রাজশাহী ও উড়িষ্যার জমিদারি তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ। কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে তিনি দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করেন। ১৯০১ সালে রবীন্দ্রনাথ সপরিবারে শিলাইদহ ছেড়ে চলে আসেন বীরভূম জেলার বোলপুর শহরের উপকণ্ঠে শান্তি নিকেতনে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পৌঁছে দিয়েছেন বিকাশের চূড়ান্ত সোপানে। রবীন্দ্রনাথের ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস ও ৩৬টি প্রবন্ধ ও অন্যান্য গদ্যসংকলন তার জীবদ্দশায় ও মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়েছে। রূপসা উপজেলার ঘাটভোগ ইউনিয়নের পিঠাভোগ গ্রামে কবির পূর্ব পুরুষের আদি ভিটায় আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্টানে উদ্বোধনী বক্তৃতায় খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. ইসমাইল হোসেন বলেছেন, বাঙ্গালির অস্তিস্ব ও চেতনার সঙ্গে রবীঠাকুর ওতপ্রোতভাবে মিশে আছেন। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের গান হয়ে উঠেছিল প্রেরণার উৎস। গীতাঞ্জলি কাব্যের জন্য নোবেল পুরস্কার পেয়ে সারা বিশ্বে বাংলা ভাষার মর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছেন রবীঠাকুর।
তিনি আরো বলেন, বাংলা সাহিত্যকে তিনি দিয়ে গেছেন এক নতুন মাত্রা। তার গান বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত। মানুষ্যত্বের বিকাশ ও মানব মুক্তি ছিল তার জীবনবোধের প্রধানতম দিক। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকাশে রবীন্দ্রনাথের রয়েছে অসামান্য অবদান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার। তিনি তার বক্তৃতায় বলেন, নিজের গল্প, কবিতা, উপন্যাস, ছোটগল্প ও অসংখ্য গানের মধ্য দিয়ে বাংলা সাহিত্যকে পরিপূর্ণতা দান করেছেন রবীন্দ্রনাথ। বিশ্বের দরবারে বাঙালিদের মাথা উঁচু করে দাঁড়াতেও শিখিয়েছেন কবিগুরু। যার কারণে বাঙালির অস্তিত্বে মিশে আছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। গল্পে, উপন্যাসে, কবিতায়, সুরে ও বিচিত্র গানের বাণীতে, অসাধারণ সব দার্শনিক চিন্তাসমৃদ্ধ প্রবন্ধে, সমাজ ও রাষ্ট্রনীতি সংলগ্ন গভীর জীবনবাদী চিন্তা জাগানিয়া লেখায় এমনকি চিত্রকলায়ও রবীন্দ্রনাথ চিরনবীন। ১৯১৩ সালে ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থের মাধ্যমে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১তম জয়ন্তীতে খুলনার রূপসায় তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার প্রথম দিনে গত ৮মে সকাল ১০টায় উদ্বোধন অনুষ্ঠান ও সভাপতির বক্তৃতায় একথা বলেন। রূপসা উপজেলার ঘাটভোগ ইউনিয়নের পিঠাভোগ গ্রামে কবির পূর্ব পুরুষের আদি ভিটায় আলোচনা সভা ও সাংক্তৃতিক অনুষ্টানের বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচীব অসীম কুমার দে, জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহাবুব হাসান, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামাল উদ্দন বাদশা, জেলা অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেড পুলক কুমার দে,শিক্ষাবীদ ও রবীন্দ্র গবেষক সুশান্ত সরকার।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবাইয়া তাছনিম। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ফরিদুজ্জামান ও মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ফারহানা ইয়াসমিন এর পরিচালনায় বক্তৃতা করেন সহকারী কমিশনার ভূমি মো. সাজ্জাদ হোসেন, থানার অফিসার ইনচার্জ সরদার মোশাররফ হোসেন, অধ্যক্ষ ফ.ম আ. সালাম, ভাইচ চেয়ারম্যান ফারজানা আফরোজ মনা, মৎস্য কর্মকর্তা বাপি কুমার দাস, প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার মজুমদার, শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ আ. রব, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আইরিন পারভিন, পিআইও আরিফ হোসেন, প্রকৌশলী এস এম ওয়াজিদুজ্জামান, নির্বাচন কর্মকর্তা মোল্লা নাসির আহমেদ, সমাজসেবা কর্মকর্তা জেসিয়া জামান, পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা তারেক আজিজ, আইিসিটি কর্মকর্তা রেজাউল করিম, সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা, ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আশরাফুজ্জামান বাবুল ও মোল্লা
ওয়াহিদুজ্জামান মিজান, আওয়ামীলীগ নেতা আ. মজিদ ফকির, সৈয়দ মোরশেদুল আলম বাবু, এস এম হাবিব, আল মামুন সরকার সহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply